![]() |
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর |
· বায়ুমণ্ডল কয়েকটি গ্যাসের স্তর দ্বারা নির্মিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নিম্নলিখিত গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে, যথা-
১। নাইট্রোজেন :- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মোট ৭৮% নাইট্রোজেন পাওয়া যায়। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা স্থিতিকরণে সাহায্য করে এবং নিউক্লিওটাইডের নির্মাণে ব্যবহৃত যা বজ্রপাতের মাধ্যমে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণে সহায়তা করে। অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে।
২। অক্সিজেন:- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ২১% অক্সিজেন পাওয়া যায়। বিভিন্ন জীবের শ্বসনে এই গ্যাস সহায়তা করে থাকে।
৩। আর্গন :- এটি এক ধরনের নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর পরিমাণ ০.৯%।
৪। অন্যান্য গ্যাস :- ০.১% অন্যান্য গ্যাস বায়ুমণ্ডলে থাকে। এটি মূলত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি হয়ে থাকে। তাপমাত্রা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা :- ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার এবং আয়নোস্ফিয়ার।বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর
ট্রপোস্ফিয়ার :-
• এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর।
• সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 10 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর অবস্থিত।
• এই স্তরে মনুষ্য-সহ সমস্ত ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।
• সমস্ত আবহাওয়া বিষয়ক বিষয়বস্তু এই স্তরে লক্ষ করা যায়। তাই
এই স্তর ট্রপোপজ নামেও পরিচিত।
• সবচেয়ে বেশি মেঘের এই অঞ্চলেই দেখা মেলে। বায়ুমণ্ডলের ১৯% জলীয় বাষ্পের এই অঞ্চলেই উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
• যদি বায়ুর চাপ কমে যায় এবং তাপমাত্রা শীতল হয় তাহলে ট্রপোস্ফিয়ারে অধিক উচ্চতা অতিক্রম করা সম্ভবপর হয়।
* স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার:-
• এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর।
• ট্রপোস্ফিয়ার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অবস্থিত।
• এই স্তরেই ওজোন স্তর লক্ষ্য করা যায়।
• এই স্তরে অবস্থিত ওজোন অণু সূর্য থেকে আগত উচ্চশক্তিসম্পন্ন
অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করতে এবং অতি বেগুনি রশ্মি থেকে প্রাপ্ত শক্তিকে তাপশক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম।
• স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার যত উচ্চতা অতিক্রম করা সম্ভবপর হবে, আবহাওয়া ততবেশি উষ্ণ হবে।
• বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহণকারী জেট এই স্তরে মূলত ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সীমান্তে লক্ষ করা যায়।
·
মেসোস্ফিয়ার :-
• স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উপরের স্তর মেসোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
• স্ট্যাটোস্ফিয়ার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫ কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে এই স্তর অবস্থিত।
• বেশিরভাগ উল্কা এই স্তরে গঠিত হয়।
• এই স্তরের উচ্চ অংশে তাপমাত্রা শীতলতম হয়ে থাকে যা প্রায় -৯০° সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়ে থাকে।
• এই স্তরে শ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টকর এবং যত উপরে যাওয়া যায়। চাপ তত কমতে থাকে।
: থার্মোস্ফিয়ার:-
• মেসোস্ফিয়ারের উপরের স্তর থার্মোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। উচ্চশক্তি সম্পন্ন এক্সরশ্মি এবং অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ যা সূর্য থেকে আগত হয়, তা মূলত এই স্তরেই শোষিত হয়।
• এই স্তরের তাপমাত্রা শীতল অনুভূত হয়ে থাকে এবং এটিকে মাঝে মাঝে বহিঃমহাকাশের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
• এই স্তরেই বিভিন্ন স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে থাকে।
• এই স্তরের উচ্চ অংশে ও নিম্ন অংশে তাপমাত্রার ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
• এই স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ কিমি ও ১০০০ কিমির মধ্যবর্তী অংশে লক্ষ্য করা যায় ।
• উচ্চ থার্মোস্ফিারের তাপমাত্রা ৫০০° – ২০০° সেলসিয়াস হয়ে থাকে এবং এই স্তরে অরোরা, উত্তর আলো এবং দক্ষিণ আলোর উপস্তিতি লক্ষ করা যায়।
এক্সোস্ফিয়ার:-
• কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে আমাদের বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর মেসোস্ফিয়ার, আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এক্সোস্ফিয়ার হল সর্বোচ্চ স্তর।
• এই অঞ্চলের তাপমাত্রা শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে। মনে করা হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিমি এবং ১৯০,০০০ কিমি মধ্যবর্তী অংশে এই স্তর অবস্থিত, যদিও তার নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ নেই।
আয়নোস্ফিয়ার : -
• আয়নোস্ফিয়ারকে কোন বিশেষজ্ঞ আলাদা স্তর হিসাবে মান্যতা প্রদান করে না।
·
মেসোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ারের যে অংশে সূর্য থেকে উচ্চ শক্তির বিকিরণ লক্ষ করা যায়, সেখানে এই স্তর অবস্থিত।
তড়িৎ আধানযুক্ত অণু ও পরমাণুর অস্তিত্ব এখানে লক্ষ করা যায়।